বাত ও গেঁটে বাতে
কিছু লোকের ধারণা আছে যে টক ফল বাতের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক । কিন্তু জেনে রাখা ভাল যে টক রস গাঁটে গাঁটে ব্যথার বাতে খুবই উপকারী । যে কোনও টক ফলের রস খেয়ে চেষ্টা করে দেখবেন । তবে পাতিলেবুর চিকিৎসায় বেশি উপকার পাওয়া যায় ।
পাতিলেবুর চিকিৎসা : পাতিলেবু তো সহজেই পাওয়া যায় । প্রথম দিন যতটা পরিমাণ পারেন পানি খান । দ্বিতীয় দিনে একটি পাতিলেবুর রসে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে সেই পানিটা খাবেন । দিনে চারবার এইভাবে পাতিলেবুর রস খান । তৃতীয় দিনে পাঁচবার এবং চতুর্থ দিনে ছয়বার- এরকমভাবে বারো দিন পর্যন্ত যিনি যতটা সহ্য করতে পারবেন খাবেন । প্রতিদিনই একটি করে লেবুর সংখ্যা বাড়াবেন । তেরো দিন থেকে একটা একটা করে লেবুর সংখ্যা কমিয়ে এনে দিনে তিনটে পর্যন্ত পাতিলেবু খাওয়ার অভ্যাস রাখুন । মানে রাখবেন পাতিলেবুর রসে চিনি মেশানো চলবে না । এতে যাঁদের মেদ বেশি তাঁদের মেদও কমবে । সঙ্গে হালকা খাবার এবং অন্যান্য ফলের মধ্যে আঙুর কমলালেবু ও আনারস খাবেন । প্রতিদিন তিনটি পাতিলেবুর রসের সঙ্গে কিছু ফল খাওয়ার অভ্যাস রাখুন এবং ফলের পরিমাণ ক্রমশই বাড়াতে থাকবেন । দুধের সঙ্গে কিসমিস খেলেও বাতের অসুখ কমে । বাতের অসুখ ভুল ওষুধে অনেক সময় শরীরে বিষক্রিয়া পর্যন্ত হয়ে যায় । এবং জ্বর হতে থাকে । এইরকম ক্ষেত্রে এই চিকিৎসাটা চেষ্টা করে দেখবেন এবং দিন পনেরোর মধ্যেই আরোগ্য লাভ করবেন ।
পদ্ধতি : দুটি হলুদ রঙের অর্থাৎ পাকা পাতিলেবু চার টুকরো করে কাটুন । প্রায় এক লিটার মতো টাটকা গরুর দুধ চারটে কাপে ভাগ করে রাখবেন । সকাল বেলার মধ্যেই কিছু সময়ের অন্তর এক কাপ করে দুধ খেতে হবে । প্রতি কাপ দুধে এক টুকরো করে কাটা লেবুর টুকরো গেলে নেবেন এবং ছানা কেটে যাওয়ার আগেই তা পান করে নেবেন । এর ফলে প্রতিদিন পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে । পনেরো দিন এই দুধ ও পাতিলেবুর চিকিৎসা পদ্ধতি চালিয়ে যান ।
শিশুদের অসুখে
ছোট বাচ্চাদের তো নানাবিধ অসুখ লেগেই থাকে । মা - বাবা তাড়াতাড়ি ওষুধপত্র খাওয়াতে শুরু করেন । কোনও কোনও সময় তেতো ওষুধও খাওয়াতে হয় - বাচ্চারা খেতে চায় না । অনেক সময় বাচ্চাদের ভোলাবার জন্যে বাজারের মিষ্টি কিনে খাওয়ানো হয় । মিষ্টির বদলে ফল খাওয়ানো অনেক ভাল । বাচ্চারা ফল খেতে ভালবাসে । ভালবাসে এই জন্যে যে অনেক ফলেই টক ও মিষ্টি দুটো স্বাদই এক সঙ্গে পাওয়া যায় । তাজা এবং শুকনো ফল বাচ্চাদের নানান অসুখে অমৃতের মতো কাজ করে অনেক সময় । তাজা ফলের মধ্যে কমলালেবু , আঙুর , কলা , আপেল , পেয়ারা , মোসম্বি , ডালিম ও শুকনো ফলের মধ্যে বাদাম খাওয়ালে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে এবং জীবনীশক্তি বাড়বে ।
দুর্বল শিশু ঃ যে সব শিশু মায়ের দুধ পায় না তারা বেশির ভাগই দুর্বল স্বাস্থ্যের হয় এবং তাদের শরীরের ওজনও সাধারণত কম হয় । এই শিশুদের নিয়মিত পাকা কমলালেবুর রস খাওয়ালে শরীর সুস্থ হতে থাকবে এবং নানাবিধ অসুখের হাত থেকে বেঁচে যাবে । পুষ্টির অভাবে যে সব বাচ্চারা দুর্বল ও রোগা সেই সব বাচ্চাদের প্রতিদিন নিয়ম করে আধখানা থেকে একটা যে রকম খেতে পারবে পাকা কলা খাওয়ালে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে । অবশ্য লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পেট খারাপ না হয় বা পায়খানা এঁটে না যায় ।
শিশুদের ওজন বাড়াতে ঃ গরু বা ছাগলের টাটকা দুধ ( ঠাণ্ডা ) দুই ভাগ সামান্য গরম পানি এক ভাগ এবং কমলালেবুর রস এক ভাগ মিশিয়ে খাওয়ালে নানা রকম অসুখের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে । ঠিক এই রকম ভাবে কমলালেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে সমান উপকার পাওয়া যাবে । আস্তে আস্তে বাচ্চার ওজনও বাড়বে ।
কমলালেবুর চিকিৎসা : আমাদের দেশে নিরানব্বই শতাংশ বাচ্চারা শুধু মায়ের দুধ খেয়েই বড় হয় । কিন্তু দুঃখের বিষয় শতকরা আশিজন মায়ের বুকে প্রয়োজন মতো দুধ থাকে না । ফলে বহু শিশুরই স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে । শিশু বয়স থেকে স্বাস্থ্য খারাপ হলে যেকোনও রোগই হতে পারে । কমলালেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন থাকায় নিয়মিত শিশুর মার্কে ও শিশুকে কমলালেবুর রস খাওয়াতে পারলে মায়ের দুধ বাড়বে এবং শিশুরও স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে । শীতকালে তো শিশুদের নিয়মিত কমলালেবুর রস বিশেষ করে খাওয়ানো দরকার । এই রস খেলে শিশু সর্দি কাশির আক্রমণ থেকেও বাঁচবে ।
আঙুরের রস : প্রতিদিন ১ চামচ করে আঙুরের রস খাওয়াতে পারলে ( ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ১ চা - চামচ থেকে শুরু অপেক্ষাকৃত বড় শিশুদের ক্ষেত্রে ১ টেবিল চামচ পর্যন্ত ) শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে । পেট পরিষ্কার থাকলে অন্য অসুখও কম হবে । এ ছাড়া সকালে বিকালে এক চামচ করে আঙুরের রস খাওয়ালে শিশুদের অকারণে কান্না , ঘ্যানঘ্যানানি ভাবও কমবে , দাঁত ওঠার সময়েও উপকার পাওয়া যাবে । শরীরে শুকনো ভাব ও শুকনো কাশিও কমবে । যে সব শিশুদের তড়কা বা ফিট মতো হতে থাকে তাদের দিনে তিনবার করে আঙুরের রস খাওয়ালে খুব তাড়াতাড়ি এই অসুখের হাত থেকে মুক্তি পাবে । সম্ভব হলে আঙুরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়াবেন । এতে শিশুর মধ্যে হাসিখুশির ভাবও আসবে , স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে । শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আঙুরের রস বেশি খাওয়ার জন্যে বাচ্চার পেট খারাপ না হয় ।
স্কার্ভি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়
স্কার্ভি ও চর্ম রোগে ( ভিটামিনের অভাবে ) ঃ একদিন অন্তর যদি পাতিলেবুর রস , মধু আর কডলিভার অয়েল ঠিক মতো খাওয়ানো যায় ( যতটা পরিমাণে খেলে শিশুর সহ্য হবে ) এই রোগে খুব উপকার পাওয়া যাবে ।
শিশুদের পেটের গণ্ডগোল ঃ শিশুদের পেটে গণ্ডগোল লেগেই থাকে । যাঁরা শিশুদের নিয়মিত ফল খাওয়ান তাঁরা পেটের অসুখ হলে শিশুদের সব ফল খেতে দেবেন না । তবে আপেল খাওয়ালে পেটের কোনও গণ্ডগোল হবে না । সেদ্ধ করে আপেল খাওয়ালে পেটের অসুখ কমবে । সেই সময় শিশুকে কমলালেবুর রস খেতে দেবেন না- বিশেষ করে টক কমলালেবু নয়ই ।