কিছু খাবারের বিধি নিষেধ
( ১ ) মাছ মাংস দুধ এক সাথে খাওয়া ভাল নয় । অর্থাৎ মাছ মাংস যখন খেতে হয় , তখন দুধ না খেয়ে , দুধ - এক ঘন্টা বাদে খাওয়া উচিত । তিনটি জিনিস একত্রে খেলে বাতের রোগ হয় ।
( ২ ) রাত্রিতে দই খাওয়া আনুচিত । দিনের বেলাতেও দই খেলে শ্লেষ্মা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় ৷
( ৩ ) চৈত্র মাসে গুড় অথবা মিষ্টি বেশী , খাওয়া ভাল নয় । কারণ চৈত্র মাসে গুড় খেলে ক্রিমি প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায় । তাতে কলেরা , পেটের অসুখ ও আমাশয় রোগ হয় ।
( ৪ ) যতক্ষণ সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ থাকবে ততক্ষণ কোন খাবার খাবেন না । ঐ সময় খেলে বিভিন্ন রোগজীবাণু দেহে প্রবেশ করে ।
( ৫ ) চৈত্র , বৈশাখ ও কার্তিক মাসে মাছ খাওয়া ভাল নয় । কারণ চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাছের বসন্ত রোগ হয় । কার্তিক মাসে মাছ খেলে শ্লোম্মা বৃদ্ধি পায় । এটা শীতকালে ঠোঁট ফাটার একটি কারণ ।
( ৬ ) কার্তিক মাসে অতি অল্প খেতে হয় অর্থাৎ যত কম খেলে চলে । কারণ এই মাসে অতিরিক্ত , খেলে বায়ু , পিত্ত , কফ বৃদ্ধি হয় , এছাড়া পেটের অসুখ হবেই ।
( ৭ ) পৌষ মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে খাদ্য বেশী খেতে হবে এই মাস টানের মাস । কম খেলে শরীর দুর্বল হয় ।
( ৮ ) অমাবস্যা , পূর্ণিমা ও একাদশীতে মাছ মাংস ভাত না খাওয়াই ভাল , আটার রুটি অথবা ফল খাওয়া ভাল । না হলে শরীরের শ্লেষ্মা বৃদ্ধি পাবে ।
( ৯ ) মুড়ি , মধু ও ঘি খেলে পানি খেতে নেই । ভারা পেটে ঘি খেতে নেই । তাতে অম্বলের রোগ হয় ।
( ১০ ) সন্ধার সময় আহার করতে নেই । এই সময় খেলে শরীরের বিশেষ ক্ষতি হয় ।
( ১১ ) তাল ও কলা এক সঙ্গে খেতে নেই । এটা খেলে ক্রিমি বৃদ্ধি হয় । ঘন্টার মধ্যে ক্রিমির উপদ্রব অনুভব হবে ।
( ১২ ) কলা গুড় অথবা চিনি বাতাসা একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয় । এর ফলেও ক্রিমি অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় ।
স্বাস্থ্যরক্ষার দৈনিক নিয়ম
আসলে রোগ - ব্যাধি একদিনেই আসে কিন্তু তা নয় - প্রকৃতির বিরুদ্ধে কার্য্য করলেই ব্যাধি আসে । আমি নতুন কিছু প্রকাশ করতেছি তা নয় । সাধু , সন্ন্যাসী মহাত্মাদের নিকট যে উপদেশ পাইয়াছি এবং উপদেশগুলি প্রত্যক্ষ ফলপ্রদ ও উপকারী বলে সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশই প্রধান উদ্দেশ্য ।
নিয়মাবলী ঃ অতি প্রত্যুষে মুহুর্তে ঘুম হতে উঠিতে হইবে । সূর্য্য উদয়ের পূর্বে গোসল করলে বায়ুপিত্ত কফের মতো হয় । প্রাতে যখন নিদ্রাভঙ্গ হয় তখন চিৎ হইয়া হাত পা টান করিয়া শুইয়া , হাত পা একসঙ্গে গুটাইয়া , হাতের কনুইয়ের দ্বারা দুই দিকের পাঁজরে চাপ দিন । পরক্ষণেই হাত পা ছাড়িয়া দিতে হয় । এইভাবে তিন চারদিন করিয়া দুই হাত সাত বার এপাশ ওপাশ আড়া মোড়া দিতে হয় তারপর ২/১ মিনিট শুইয়া থাকিতে হয় । পরে উপুড় হইয়া থাকিতে হয় । এই ক্রিয়া করার পর ১ গ্লাস ঠান্ডা পানি খাইতে হয় পরে পায়খানায় যাওয়া বিধেয় ।
উপকারিতা ঃ কোষ্ঠ পরিষ্কার প্লীহা , লিভার সতেজ বলবান হয় । শ্লেষ্মা , প্লীহা , লিভার দোষ অবশ্যই বিনা ঔষধে নিরাময় হয় । প্রাতে ঘুম হতে উঠিয়া , আহারের পর এই দুই সময় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নিম্ন ভাগ দিয়া কপালে দুই তিনবার ঘষিয়া দিতে হয় । ইহাতে কফাশ্রিত বায়ু ও শ্লেষ্মার দোষ নষ্ট হয় । দক্ষিণ নাসিকার শ্বাস প্রবাহিত হবার সময় বাহ্য করলে কোষ্ঠ খেলাসা থাকে ।
নিষিদ্ধ আহার
১। মাছ , মাংস , দুধ একপাতে খাওয়া উচিত নয় । মাছ , দুধ এক সঙ্গে খাইলে বিরুদ্ধ ভোজন অম্ল অজীর্ণ ব্যাধি হয় ।
২। রাত্রে দধি খাওয়া উচিত নয় । শ্লেষ্মা বৃদ্ধি পায় । দিনে দই খেলে সামান্য পানি ও লবন মিশ্রিত করিয়া খাওয়া উচিত । চৈত্রমাসে গুড় খাওয়া উচিত নয় । কৃমি অত্যন্ত বৃদ্ধি হয় । কলেরা , পেটের অশুভ আমাশা হওয়ার সম্ভাবনা । চৈত্র , বৈশাখ ও মাঘ মাসে মাছ খাওয়া ভালো নয় তার কারণ মাছের বসন্ত হয় । কার্তিক মাসে মাছ খাইলে শ্লেষ্মার বৃদ্ধি হয় । তবে নদীর মাছে ক্ষতি হয় না । কার্তিক মাসে আহার কম করিতে হয় । অতিরিক্ত আহারে বায়ুপিত্ত কফ কুপিত হয় । পৌষ মাসে দেহকে খাদ্য বেশী দিতে হয় । কারণ এই মাস টানের মাস । কম খাদ্যে দেহ দুর্বল হয় । রবিবারে মাছ , মুসুরীর ডাল খাওয়া নিষেধ । রবিবারে মুসুরির ডাল খাইলে বহুমূত্র , রোগ , শরীর গরম , মাথার উত্তেজনা হয় । পরীক্ষার জন্য প্রমাণ করলেই বুঝিতে পারিবেন । বিশেষভাবে পরীক্ষা করে দেখুন । বেশ কিছুদিন নিরামিষ খাইয়া রবিবার দিন মুসুরীর ডাল খাইলে পরিষ্কারভাবে বুঝিতে পারিবেন । অমাবস্যা , পূর্ণিমা , একাদশীতে ভাত খাওয়া ভালো নয় । এসব তিথিতে উপদেহে রসাক্রান্ত হয় , শ্লেষ্মার আধিক্য হয় । বাতের রোগীরা এই তিথির উপবাসে উপকার পাইবেন । গ্রহ সমস্যার রোগী উপকৃত হবেন । এছাড়া অষ্টমী , রাম নবমী , শিব চতুর্দশী , জন্মাষ্টমী , দোলনপুর্ণিমা এই কটা দিনে উপবাস অথবা ভাত গ্রহণ করা উচিত নয় ।
নিষিদ্ধ করনীয়
সূর্যের দিকে মুখ করিয়া প্রসাব করা উচিত নয় ইহাতে শিরঃপীড়া হয় । চন্দ্রের দিকে মুখ করিয়া প্রসাব করলে ক্রুগত রোগ জন্মে । দাঁড়াইয়া প্রসাব করলে ইন্দ্রিয় শক্তি শিথিল হয় । পানিতে প্রসাব করলে মেহ রোগ জন্মে । বুধবার ব্যতীত ক্ষৌরকর্ম নিষেধ । তার কারণ নানা ব্যধি জন্ম নেয় ।
তিথিভেদে নিষিদ্ধ ভোজন
প্রতিপদে দ্বিতীয়াতে কুমড়া খাইলে ব্রণ হয় বৃহতী খাইলে অর্বুদ পটল খাইলে তৃতীয়াতে চতুর্থীতে পঞ্চমীতে বাতরুক্ত মূলা খাইলে আমবাত বেল খাইলে পিত্ত ব্যাধি ষষ্টীতে নিম খাইলে গলগন্ড সপ্তমীতে নারিকেল খাইলে অৰ্জীন অষ্টমীতে বাত শ্লেস্মা লাউ খাইলে কলমীশাক খাইলে নবমীতে অম্লপিত্ত দশমীতে শিম খাইলে জ্বর একাদশীতে পুঁইশাক খাইলে যক্ষাকাশ দ্বাদশীতে বেগুন খাইলে চুলকানি উদরাময় মাসকলাই খাইলে ত্রয়োদশীতে পূর্নিমা - আমাবস্যায় মাছ , মাংস খাইলে শ্লেস্মা ও বায়ুজনিত পীড়া জন্মে । রাত্রে শাক খাইলে পিত্ত কুপিত হয় । নিষেধ তিথিতে নিষিদ্ধ ভোজন করলেই বুঝিতে পারিবেন , নিশ্চয়ই শরীর কিছু কম বেশি খারাপ হইবে । আমি আমার এক বন্ধুকে বলি । তিনি আমাদের র্যাম আখ্যা দিয়া হাসিয়া বলিলেন , আমরা বাঙ্গালী সবদিন যদি এইভাবে চলি তবে তো শরীর গঠন কেন পতন ঘটিবে । আমি বলি , বন্ধু প্রকৃতির কোনটাই মিথ্যা নয় । বেশ পরীক্ষা করিয়া দেখা যাক । তিনি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন , ত্রয়োদশীতে একটি বেগুন কাটিয়া অনুবীক্ষন যন্ত্র দিয়া পরীক্ষায় পাওয়া গেছে অতি ক্ষুদ্র পোকা জন্মিতেছে ও মরিতেছে ঠিক তদ্রুপ পূর্নিমাতে ও মাংসে পোকা জন্মে ।