আমাশয় -
লক্ষনঃ অ্যামিবা ব্যসিলাস নামক এক প্রকার জীবাণুর আক্রমণে এই রোগ হয় । পেটে কামড়ানি সহ পিছল পায়খানা , কখনো বা সাদা হয় , কখনো বা পেটব্যাথা ছাড়াই বারবার তৈলাক্ত পায়খানা হয় । চিকিৎসা ঃ থানকুনি পাতার রস ২ চামচ , পাথরকুচি পাতার রস ২ চামচ দুর্বার রস ২ চামচ , আদার রস ১ চামচ মিশিয়ে খেতে হবে দিনে ৩ বার করে পরপর ৩ দিন ।
পথ্যঃ কাঁচকলা সিদ্ধ , থানকুনি পাতা বাটা দিয়ে কয়েক গ্রাস ভাত খেতে হবে । এ ছাড়া হাল্কা এবং সহজ পাচ্য খাদ্য খাওয়া উচিত ।
রক্ত আমাশয় লক্ষণ : আমাশয় দীর্ঘদিন চললে আমের সঙ্গে রক্ত পড়ে একেই রক্ত আমাশয় বলে । চিকিৎসা ঃ দুর্বার রস ৫০ গ্রাম এবং গাঁদা ফুলের রস ২০ গ্রাম মিশিয়ে খেতে হবে ৪ ঘণ্টা পর পর তিনবার ।
পথ্য ঃ কাঁচকলা সিদ্ধ , পেঁপে সিদ্ধ দিয়ে গরম ভাত খেতে হবে ।
অসুপিত্ত -
লক্ষনঃ খাদ্যদ্রব্য ঠিকমতো হজম না হওয়া , তেতো বা টক ঢেঁকুর , বুকে ব্যথা , গলাজ্বালা , অরুচি , বমি , শরীর ক্লান্ত এবং ভারবোধ এই রোগের লক্ষণ । পিত্ত গরম হওয়ার জন্য এ রোগের জন্ম হয় ।
চিকিৎসা - রাত্রিবেলা কাঁচের গ্লাসে ১ গ্লাস গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে ৪/৫ টুকরো শুকনো আমলকি , ৩/৪ টুকরো হরিতকি , ৩/৪ টুকরো বহেড়া এবং ২ গ্রাম কটকী ভিজিয়ে ঢেকে রেখে দিতে হবে । সকালে খালি পেটে ঐ পানিটা ছেঁকে নিয়ে খেতে হবে । এ ছাড়া একটা কাঁচা আমলকী ভাতে সিদ্ধ করে তা দিয়ে কয়েক গ্রাস গরম ভাত খেতে হবে যতদিন না রোগ ভালো হয় ততদিন খেতে হবে ।
ক্রিমি -
লক্ষণ ঃ অপরিস্কার বা কীটযুক্ত কাঁচা ফলমূল , পচা মাছ , মাংস বেশী মিষ্টি , অজীর্ণতা প্রভৃতি কারণে ক্রিমি রোগ হয় । বেশী খিদে অথবা খিদে না হওয়া , নাকের অগ্রভাগ চুলকানো , পেট ব্যথা পেটফাঁপা , মুখে দুর্গন্ধ , মুখ দিয়ে পানি বা থুথু ওঠা , ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দাঁত কিড়মিড় করা প্রভৃতি এই রোগের লক্ষণ । চিকিৎসাঃ কালমেঘ পাতার রস ১ চামচ , নিমপাতার রস ১ চামচ , চিরতা ভেজানে পানি ১ চামচ , পলাশ বীজ চূর্ণ ১ গ্রাম , সোমরাজ ১ গ্রাম , বিড়ঙ্গ ১ গ্রাম , ২ চামচ মধুসহ মিশিয়ে অর্ধেকটা সকালে খালিপেটে বাকী অর্ধেকটা রাত্রে শোবার সময় খেতে হবে দুদিন একদিন পর একদিন ।
পথ্যঃ কলা , গুড় চিনি প্রভৃতি মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া নিষেধ ।
জাতিসঃ
লক্ষণঃ যকৃতের দোষ , আহারের অত্যাচার , মদ্যপান , ক্রিমি , পানি , দোখ প্রভৃতি কারণে এই রোগ হয় । এই রোগে রোগীর গায়ের চামড়া , চোখ মুখ , মৃত্র প্রভৃতি হলদে হয় ।
চিকিৎসাঃ নিমগুলঞ্চের রস ২ চামচ , কুলেখাড়ার রস ২ চামচ , কলমী শাকের রস ২ চামচ , হেলেঞ্জার রস ১ চামচ , কাঁচা হলুদের রস ১ চামচ একত্রে মিশিয়ে ভোরবেলা খালিপেটে খেতে হবে পর পর ১৫ দিন ।
পথ্যঃ মিছরী ভেজানো পানি , আখের রস , বাতাবী লেবু অবশ্যই খেতে হবে রোগ সারা পর্যন্ত । এছাড়া পেঁপে সিদ্ধ , উচ্ছে সিদ্ধ , কাঁচকলা সিদ্ধ প্রভৃতি দিয়ে ভাত খেতে হবে ।
লক্ষণ ঃ খাদ্যদ্রব্য ঠিকমতো হজম না হলে এই রোগ হয় । অরুচি , খিদে না হওয়া পেটফাঁপা , বমি , পেটখারাপ , ঢেঁকুর ওঠা , ময়লা জিভ , মুখে দুর্গন্ধ , গলা বুক জ্বালা পেটভার , পেটব্যথা , অম্ল বা অ্যাসি পেটে বায়ু জমা , বুক ধড়ফড় করা প্রভৃতি এই রোগের প্রধান লক্ষণ ।
চিকিৎসাঃ হরিতকি ৫০ গ্রাম , আমলকি ৫০ গ্রাম , বহেরা ৫০ গ্রাম , সোনা পাতা ২৫ গ্রাম , বেলচূর্ণ ২৫ গ্রাম , বিটলবন ২৫ গ্রাম , জোয়ান ২ গ্রাম , যবক্ষার ১০ গ্রাম , আদাট ৫ গ্রাম , পিপুল ৫ গ্রাম । দ্রব্যগুলোকে রোদে শুকিয়ে হামানদিস্তায় ভালো করে চূর্ণ করে কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে ১ টা শিশিতে ভরে রাখতে হবে । রোজ দুবেলা ভাত খাবার পর ১ চামচ করে এই চূর্ণ খেয়ে ঠাণ্ডা পানি খেতে হবে ৭ দিন । পথ্য ঃ সহজে হজম হয় এমন খাদ্য খাওয়া উচিত । গুরুপাক দ্রব্য খাওয়া নিষেধ ।
উদরাময় -
লক্ষণঃ ঠাণ্ডালাগা , গরমলাগা , গুরুপাক দ্রব্য ভোজন , বদহজম প্রভৃতি কারণে এই রোগ হয় । বার বার করে তরল পায়খানা হবার নাম উদরাময় ।
চিকিৎসা ও পাথরকুচি পাতার রস আধকাপ সামান্য লবণসহ ২ ঘণ্টা পর পর খেতে হবে মল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত । এছাড়া চিনি , লবণ এবং গরমপানি ঠাণ্ডা করে একসাথে মিশিয়ে খাবার স্যালাইন তৈরী করে খেতে হবে প্রতি আধঘণ্টা পর পর ১ চামচ করে ।
পথ্য ঃ লঘু পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাদ্য খেতে হবে । উদরাময় খুব বেশী হলে প্রয়োজনে বার্লি খাওয়াতে হবে ।
বমি -
লক্ষণ- ১ বেশী লবণ খাওয়া , অসময়ে ভোজন , বেশী ভোজন , অনভ্যস্ত দ্রব্য খাওয়া , অজীর্ণতা , ক্রিমিদোষ , অপ্রিয় জিনিস দেখা , শোনা বা ঘ্রাণের দ্বারা বায়ু পিত্ত , কফ কুপিত হয়ে খাদ্যবস্তুকে পেটের থেকে ঠেলে বর করে দেয় মুখ দিয়ে । এরই নাম ৰমন বা বমি ।
চিকিৎসা ১০ গ্রাম পিপুল ১০ গ্রাম গোলমরিচ ১০ গ্রাম গুলভ , ১০ গ্রাম হরিতকি রোদে ভালো করে শুকিয় হানামানিতায় ভালো করে চূর্ণ করে একটা শিশিতে ভরে রেখে দিন । প্রয়োজনে এই চূর্ণ ১ চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে চেটে খেতে হবে দিনে দু'বার করে কয়েকদিন ।
পথ্য ঃ টক , ঝাল বা গুরুপাক দ্রব্য খাওয়া নিষেধ ।
অরুচি -
দক্ষণঃ জ্বর , ক্রিমি , অতিসার প্রভৃতি রোগে কিছুদিন ভূগলে আহারে অনিচ্ছা দেখা দেয় । একেই অরুচি বলে ।
চিকিৎসা ঃ আমরুল শাবের টক খেলে অরটি দূর হয় । অথবা চিনি ১০ গ্রাম , আমলকি ১০ গ্রাম এবং কিসমিস ১০ সন একত্রে বেটে আহারের সময় মাঝে মাঝে আচারের মতো খেলে অরুচি দূর হয় ।
পথ্য ঃ রুচি অনুযায়ী খাদ্য খাওয়া উচিত ।
পেটে ব্যথা ঃ
লক্ষণ : খাদ্যবস্তু হজম না হওয়া , পেটে বায়ু হওয়া , আমাশয় , ক্রিমি প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে পেটে ব্যথা হয় ।
চিকিৎসা -আমলকি চূর্ণ ১ গ্রাম ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে পেট ব্যথার উপকার হয় । অথবা হরিতকি ১০ গ্রাম , উঠ ১০ গ্রাম , জোয়ান ১০ গ্রাম সৈন্ধব লবন ১০ আম । দ্রব্যগুলো একত্রে চূর্ণ করে নিয়ে শিশিতে ভরে রেখে দিতে হবে । পেটে ব্যথার রোগীকে দুপুরে খাবার পর ১ চামচ চূর্ণ এবং রাতে খাবার পর ১ চামচ চূর্ণ খাইয়ে দিয়ে ১ গ্লাস পানি খাওয়াতে হবে ।
পথ্যঃ ও পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাদ্য খাওয়া উচিত ।