নানান স্বাস্থ্য সমস্যায় শাক - সব্জি
তুলনায় অধিক হলেই ডায়াবেটিস রোগ হয় । ইদানিং এই রোগের প্রকোপ সাংঘাতিক হারে বাড়ছে । কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ সব্জি যেমন- বীট , আলু , রাঙাআলু , ওল , কচু ও খামালু প্রভৃতি সব্জি বেশী খাওয়া চলবে না । আবার তেলেকুচা , উচ্ছে - করলা , মেথির শাক , নিমপাতা , পলতে ও হেলেঞ্চার শাক হল এই রোগের পক্ষে মহৌষধ । আবার ডায়াবেটিস রোগে সাদারঙের বেগুন দারুণ উপকারী । এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে থোড় , মোচা , ট্যািরশ , ডুমুর , পালং , চিকনি , মেথি , তমাল ও গিমে শাক খেতে দিন । এছাড়া ও কাঁচা রসুন রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সক্ষম ।
রক্তচাপ ( ব্লাডপ্রেসার ) নিয়ন্ত্রণে : অধিক রক্তচাপ অর্থাৎ হাই - ব্লাডপ্রেসার হল এখনকার সময়ে অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা । নানান কারণে হাই - ব্লাডপ্রেসার হতে পারে । পটাশিয়ামের রক্তচাপ কমানোর বা নিয়ন্ত্রণের একটা ক্ষমতা রয়েছে । পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শাকসব্জি যেমন- আলু , কচু , ট্যারশ , জিঙে , উচ্ছে , বীট , গাজর , রাঙাআলু , মটরশুঁটি , পালং , বাঁধাকপি এবং নটেশাক । এগুলি নিয়মিত আহারের সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস করুন । দেখা গেছে সুষনীশাক ও সজনের পাতা সেদ্ধ ভাতের সঙ্গে খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায় । সজনের পাতা সেদ্ধ পানি কিন্তু ফেলে দেবেন না । এছাড়াও কাঁচা রসুনের উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে আনার ক্ষমতা আছে । নিয়মিত এককোয়া করে কাঁচা রসুন ভাতের সঙ্গে খেলে এই রোগে উপকার পাবেন ।
চোখের সমস্যায় : ভিটামিন ' এ ' চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ চোখের রেটিনার রড - কোষ গঠনের জন্য এই ভিটামিন খুবই প্রয়োজন । ভিটামিন - ‘ এ ’ - এর অভাব থাকলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং রাতকানা রোগ হয় । চোখের সমস্যার জন্য শিশুদের প্রথম থেকেই ভিটামিন - এ আছে এমন শাক সব্জি খেতে দিন । আহারে এইসব সব্জির ব্যবস্থা রাখবেন । ভিটামিন ‘ এ ’ পাবেন এমন সব্জিগুলি হল গাজর , বাঁধাকপি , লেটুস , পালং , টমেটো , নটে , মেথি , সজনে এবং সরষেশাক । দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য বথুয়া এবং গিমার শাক দারুণ উপকারী ।
স্তনের দুধ উৎপাদনে : সন্তান প্রসব করেছেন এমন অনেক মায়ের স্তনে দুধ উৎপাদন ঠিকমতো হয় না । এ জন্য শিশু মায়ের বুকের দুধের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় । এটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক । শিশুকে সুস্থ রাখতে মায়ের বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ানো দরকার । দেখা গেছে সন্তান প্রসব করেছেন এমন মাকে আহারে আলুও কলমীশাক সেদ্ধ খেতে দিলে স্তনে দুধের উৎপাদন অনেকটা বাড়ে ।
অম্বল গ্যাসে : অম্বল - গ্যাসের সমস্যা এখন বাঙালীর ঘরে ঘরে । আর এর প্রধান কারণ নিয়ম না মেনে খাওয়া - দাওয়া । খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়ায় এই সমস্যা তৈরী হয় । আহারে নিয়মিত কয়েকটি সবজি রাখলে অম্বল - গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমবে । থোড় খাবেন । দেখবেন এতে হজম শক্তি বাড়বে । আবার আমরুল , গিমা , বথুয়া , পুদিনা , ধুন্দুল , পটল , পলতে এবং কাকরোল প্রভৃতি সব্জি খেলে অম্বল ও গ্যাসের প্রকোপ কমবে । সজনে পাতা সেদ্ধ গরমভাতের সঙ্গে মেখে খান । হাতেনাতে উপকার বুঝতে পারবেন । আবার ছোলাশাক সেদ্ধ করে বীটলবণ যোগ করে ভাতের সঙ্গে মেখে খেলে অম্বল ও বুকজ্বালা থাকবে না । অম্বল ও গ্যাসজনিত পেট ফাঁপায় দেখা গেছে সরষে ও থানকুনির শাক বেশ
কার্যকরী । কাঁচা শশা আহারের সঙ্গে খেলে অম্বল থাকবে না এবং খাবার সহজে হজমও হয় ।
হৃদরোগে : এখনকার দিনে হৃদরোগ হল মারাত্নক স্বাস্থ্য - সমস্যা । পরিবেশ দূষণ , কাজের ও মানসিক ঝামেলার জন্য টেনশন , উচ্চরক্তচাপ অনিয়ম করে “ খাওয়া এবং ঘুম ঠিকমতো না হলে এটি হতে পারে । নিয়মিত সব্জিসহ নিরামিষ খাওয়া অভ্যাস করলে হৃদরোগের প্রকোপ অনেকটাই কমে । আপনি পুণর্নবা , বাঁধাকপি , পালং ও পলতে প্রভৃতি শাক খাবেন । এছাড়াও , টমেটো , আলু , গাজর , বীট , ওলকপি এবং কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজ খাবেন । দেখবেন এতে হৃৎপিণ্ড সুস্থ ও সচল থাকবে এবং হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যাবে । আবার ব্রাহ্মীশাক ( বিরমী শাক ) খেলে এর মধ্যে “ ব্রাহ্মীন্ ” নামক ভেষজ অ্যালকালয়েড থাকার জন্য হৃৎপিণ্ডে শক্তি জোগায় এবং একে কর্মক্ষম রাখে ।
হাত - পা জ্বালায় ঃ হাত ও পায়ের জ্বালা কমাতে আপনি হেলেঞ্চা , বথুয়া ও তেলেকুচার শাক ভাতের সঙ্গে মেখে খাবেন । দেখবেন এতে উপকার পাবেন ।
অর্শতে : দীর্ঘ মেয়াদি কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থাকলে অর্শ হতে পারে । এই রোগে
. মলদ্বাল চুলকায় এবং রক্ত পড়ে । আহারে সব্জি খেলে এই রোগে উপকার পাবেন । পায়খানা নরম করতে পারে এমন শাক্ - সব্জি খেলে অর্শের সমস্যা ঠেকানো যাবে । এজন্য বথুয়া , কচি চালকুমড়ো , লাউ , খেসারি , পুঁই , ওল , পেঁপে ও বেগুন প্রভৃতি সব্জি খাবেন । এই রোগে কাঁচকলা , থোড় , মোচা ও ইঁচড় প্রভৃতি সব্জি এমদম খাবেন না ।
পাতলা পায়খানায় : পাতলা পায়খানা হল পেটের সমস্যা । এ সময়ে আপনাকে খাবার বিষয়ে সাবধান হতে হবে । পাতলা পায়খানা এবং পেটের গণ্ডগোল হলেই নটে , বাঁধাকপি , বথুয়া , মেতি , গাঁদাল , থানকুনি , কাঁচাপেঁপে ও কাঁচাকলা প্রভৃতি সব্জি সেদ্ধ অথবা ঝোল করে খাবেন । সজনে পাতার ঝোল এই রোগে বেশ কার্যকরী ।
লিউকোরিয়ায় : লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব হল মেয়েদের একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমসা । এই রোগে শরীর দুর্বল হয়ে যায় , মেজাজ খিটখিটে হয় এবং দেহে রক্তাল্পতা দেখা যায় । রোগের শুরুতেই কাঁচাকলা , থোড় , মোচা , এবং মেথি ও কুলেখাড়ার শাক খাওয়া অভ্যাস করলে এই রোগ সারানো যাবে ।
আলসারে : আলসার হল একটি ক্ষতিকারক রোগ । পেটে আলসারের প্রধান কারণ হল গ্যাসট্রিক অ্যাসিডের অধিক ক্ষরণ , যা পাচনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় । আজকাল অনেকেই এই রোগে ভোগেন । চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া - দাওয়া ঠিকমতো মেনে করলেই এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া অসম্ভব নয় । আপনি আহারে নিয়মিতভাবে লাউ , চালকুমড়ো , কাঁচাপেঁপে , কাঁচাকলা , মিষ্টি আলু , পাকা কাঁকরোল প্রভৃতি সব্জি খাবেন । দেখবেন এতে উপকার গাবেন । কাঁচা পেঁপের মধ্যে থাকা সাদা দুধের মতো আঠায় থাকা প্যাপেন উৎসেচক হল হজমসহায়ক
এবং আলসার সারাতেও সক্ষম । এছাড়াও খাবার সময় এককোয়া কাঁচা রসুন খাবেন কারণ এটি অন্ত্রে আলসার সারাতে বেশ কার্যকরী ।
ক্ষিদে বাড়ানোয় ঃ সময়ে ক্ষিদে না পাওয়া এমনকি খাবারে অরুচি হল আর এক স্বাস্থ্য সমস্যা । ইদানিং এটির উপদ্রব বেড়েছে । দেখা গেছে দৈনিক আহারে কয়েকটি নির্দিষ্ট সব্জি খেলে এই সমস্যা বেশ কিছুটা কমে যাবে । পলতে , পুদিনা , মেথিশাক , নিমপাতা , তেলেকুচার পাতা , বথুয়া , গাঁদাল , সজনে ও মুলোশাক খেলে আহারে অরুচি দূর হবে এবং ক্ষিদে বাড়বে । এছাড়াও উচ্ছে , থোড় কাঁচা কুমড়ো এবং খেসারিশাক খেলে ক্ষিদে বাড়ে । চর্মরোগে ঃ চর্মরোগ হল ত্বক সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যা । নানান কারণে এটি হতে পারে । তবে ত্বক পরিষ্কার এবং রক্ত পরিশোধনের জন্য সব্জি বেশ উপকারে লাগে এবং চর্মরোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে । মেথিশাম নুনিয়াশাক কুলেখাড়া , নটে , নিমপাতা , হেলেঞ্চা , পলতে , উচ্ছে এবং পুনর্ণবাশাক প্রভৃতি সব্জি খেলে চর্মরোগের বিরুদ্ধে দেহের ভিতরে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয় । খোস - চুলকানি সারাতে নিমপাতা ভাজা , কাঁচা রসুন এবং হেলেঞ্চা ও নটেশাক বেশ কার্যকরী ।
চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় : চুলের সৌন্দর্য রক্ষা কাজটি করে ভিটামিন ' সি ' । ভিটামিন - ‘ সি ’ চুকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে এবং সহজে ভেঙে যেতেও
দেয় না । চুলের স্বাভাবিক জেল্লা বজায় রাখতে সাহায্য করে । এছাড়া চুল সহজে ‘ ওঠেও না । ভিটামিন - ' সি ' ছাড়াও ক্যালসিয়াম , পটসিয়াম এবং সোডিয়ামের মতো খানিজ খাদ্যোপাদানগুলিও চুলের স্বাস্থ্য গঠনের জন্য প্রয়োজন । চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য রক্ষায় টমেটো , গাজর , বাঁধাকপি , লেটুস ও মেথিশাক প্রভৃতি সব্জি খাবেন । অপুষ্টিকর কারণে চুল ওঠা ঠেকাতে নিয়মিতি ভাতের সঙ্গে মেথি ও থানকুনি শাক খাবেন । এই দুটি শাক চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায় এবং খুসকি তাড়ায় । মেথিপাতা চুলকে করে ঘন ও কালো ।
সর্দি - কাশিতে : সর্দি - কাশি হল এখনকার দিনে এক সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা । বেশকিছু শাকসব্জি এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । শিশুদের বুকে জমে থাকা সর্দি কমাতে গরম ভাতের সঙ্গে আমরুল শাক খেলে উপকার পাবেন । সর্দির জন্য পুঁই শাকও সমান কার্যকরী । সর্দি ও কাশির মতো রোগের জন্য থানকুনি , মেথি , পুনর্ণবা , মটর ও হেলেঞ্চা বেশ উপকারী এটা আজ প্রমাণিত । শ্বাসকষ্ট ও বুকে জমে থাকা সর্দি সারাতে রাঙাআলু এবং বাঁধাকপি ও ব্রাহ্মীশাক বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।
ঋতু রোগে : অনিয়মিত এবং কম পরিমাণে স্রাব হল মেয়েদের মারাত্নক স্বাস্থ্য সমস্যা । এই রোগ সব সময় মেয়েদের টেনশন বা চিন্তায় রাখে । সব্জির মধ্যেও এই সমস্যা সারানো বা কমানোর ক্ষমতা আছে । গিমা , থানকুনি ও মেথির শাক , বেগুন , ট্যারশ , সীম , বরবটি , সজনের ফুল ও ডাঁটা , উচ্ছে , ওল ও চালকুমড়োর মতো সব্জি হল বিশেষ উপকারী ।
স্মৃতিশক্তিতে : শুষণি , ব্রাহ্মী এবং থানকুনি প্রভৃতি শাকের একটা স্মৃতিশক্তি বাড়ানো ক্ষমতা আছে । শিশুদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়মিতভাবে ৩-৪ খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরী করুন । বাজারে প্রচলিত ‘ ব্রেনোলিয়া ' নামক টনিে প্রধান উপাদান হল ব্রাহ্মী । মস্তিষ্কের সতেজতা ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্রাহ্মী ও পালংশাক দারুণ উপকারী ।
অনিদ্রায় ঃ ঠিকমতো ঘুম না হওয়া হল এক ধরনের সমস্য । এটি যেমন অসহনীয় তেমন ক্ষতিকারকও বটে । যাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না তারা দৈনিক আহারে সেলারি , নুনিয়া , ও সুষনি প্রভৃতি শাক খান ।
প্রস্রাবের সমস্যায় ঃ প্রস্রাব নিয়মিতভাবে তৈরী ও নিঃসরণ না হওয়া হল একটি মারাত্নক সমস্যা । এই সমস্যা থেকে নানান রোগও হতে পারে । শাক সব্জির মধ্যে পুঁই , নুনিয়া , লেটুস , সরষে , বথুয়া , আমরুল , পুনর্ণবা , ট্যািরশ ও আলু প্রভৃতি নিয়মিত খেলে প্রস্রাব তৈরী এবং নিঃসরণ ঠিকমতো হবে । প্রস্রাবের পরিমাণও বাড়বে ।