প্রয়োজনীয় কথা স্বাস্থ্য মানুষের সব চেয়ে বড় সম্পদ । বিডিঅলপোস্ট

 প্রয়োজনীয় কথা স্বাস্থ্য মানুষের সব চেয়ে বড় সম্পদ । আমরা যদি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি । তবে সুস্থ দেহে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারি । শরীর সুস্থ ও নীরোগ রাখতে হলে খাদ্য , পানীয় , বিশ্রাম , সুনিদ্রা , আলো বাতাস , পোষাক পরিচ্ছদ , গোসল , সংযম প্রভৃতির দিকে নজর দেওয়া উচিত । তবু যদি রোগের আক্রমণ আমাদের দেহে ঘটে তবে প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ গাছ - গাছড়ার প্রয়োগ অবশ্যই করা উচিত । রোগ কঠিন মনে হলে উপযুক্ত চিকিৎসা দেখানো দরকার । বয়স অনুযায়ী এবং শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী সহজপাচ্য পুষ্টিকর ও লঘু খাদ্য খাওয়া উচিত । খাবারের অন্তত আধঘণ্টা পর ঠাণ্ডা পানি পান করা উচিত । পেটের রোগ থাকলে সামান্য উষ্ণ কিছুটা পানি পান করা উচিত । বৃদ্ধ বয়সে খাবারের পরিমাণ কমানো উচিত ।

খাদ্য ছয় প্রকার ।

যথা ( ১ ) প্রোটীন জাতীয় ( ২ ) ফ্যাট্ বা চর্বি জাতীয় ( ৩ ) কার্বো - হাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় ( ৪ ) লবন জাতীয় ( ৫ ) পানি ( ৬ ) ভিটামিন । পানি ছাড়া জীবন বাঁচানো সম্ভব নয় । বিশুদ্ধ পানিই উত্তম পানীয় । সেদিক থেকে টিউবওয়েল - এর পানিই অত্যন্ত নিরাপদ । সব থেকে ভালো পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়া । মুক্ত বায়ু ছাড়া দেহকে সুস্থ রাখা সম্ভব নয় । তাই যে ঘরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ মুক্ত বায়ু চলাচল করে সেই ঘরে বসবাস করা উচিত । যে ঘরে আলো এবং রোদ প্রবেশ করতে পারে সেখানে বসবাস করা উচিত । প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে তাকলে দেহ সুস্থ ও নীরোগ থাকে । ভোর বেলা ভ্রমণ করা সব চেয়ে ভালো ব্যায়াম । এছাড়া খালিহাতে ব্যায়াম , দৌড়ানো , সাঁতার কাটা উৎকৃষ্ঠ ব্যায়াম । ভোরবেলা মলমূত্র ত্যাগ করবার পর গায়ে ভালো করে সরষের তেল মেখে গোসল করা উচিত । গোসলের পানিতে সামান্য লবণ মেশানো উচিত । গোসলের আগে গা হাত - পা ভালো করে গামছা দিয়ে রগড়ে গোসল করা কর্তব্য T প্রত্যেক সুস্থ্য মানুষের প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমোন উচিত । শিশু ও রোগী ছাড়া দিনে ঘুমোন উচিত নয় । রাতজাগা ক্ষতিকর । রোগীর ঘুম ভাড়ানো উচিত নয় । হঠাৎ করে গরম থেকে ঠাণ্ডায় বা ঠাণ্ডা থেকে গরমে যাওয়া উচিত নয় । মলমূত্রের বেগ আটকে রাখা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক ।তরিতরকারী , ফল ইত্যঅদি ভালো করে ধুয়ে খাওয়া উচিত । কোন রোগীর ব্যবহার করা জিনিস বা আসবাবপত্র ব্যবহার করা ঠিক নয় । ভেষজ বিজ্ঞানীরা খাদ্যকে প্রধানতঃ ছয়ভাগে ভাগ করেছেন ।

যথা : ( ১ ) প্রোটীন জাতীয় খাদ্য ও শরীরের তাপ উৎপাদন , দহনক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ , ক্ষয়পূরণ ও শরীরের উপাদানসমূহ নির্মাণ প্রোটীন জাতীয় খাদ্যের কাজ । ( ২ ) কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য দৈহিক তেজ , কর্মক্ষমতা এবং তাপ উৎপাদন ও চর্বিগঠন কার্বোহাইড্রেই বা শর্করাজাতীয় খাদ্যের কাজ । ( ৩ ) ফ্যাট জাতীয় খাদ্য ও শরীরের তেজ ও উত্তাপ উৎপাদন এবং মেদ বা চর্বিতৈরি করা এই জাতীয় খাদ্যের কাজ । ( 8 ) পানি ও খাদ্য পরিপাক থেকে শুরু করে শরীরের সমস্ত কাজে সহায়তা করা এবং দেহের অস্বাস্থ্যকর পদার্থসমূহ বের করে দেবার জন্য পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । পানি চাড়া প্রাণ বাঁচে না । তাই পানির অন্য নাম জীবন । ( ৫ ) লবন লবন দেহের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । সাধারণ লবণ , ফলমূল , শাকসব্জী ও অন্যান্য খাদ্য এবং চুন , পটাস , সোডা ইত্যাদি লবণ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত ।( ৬ ) ভিটামিন ঃ এই সমস্ত উপাদান চাড়াও আরো একটি সূক্ষ্ম উপাদান আছে যার অভাবে জীবনীশক্তি দ্রুত কমে যায় এবং রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় , দেহ দুর্বল হয় , বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হয় , এই উপাদানের নাম ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ । কয়েকটি প্রধান ভিটামিনের আলোচনা নীচে করা হলো

( ক ) ভিটামিন ' এ ' ঃ এই জাতীয় ভিটামিনের অভাবে রাতকানা , চোখ ও কানের রোগ , সর্দি , ইনফ্লুয়েঞ্জা , কাশি , নিউমোনিয়া , মূত্রপাথরী প্রবৃতি রোগ হয় এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির ক্ষয় ও ক্রিয়াহীনতার জন্য রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় । পালং শাক , টমেটো , রাঙাআলু , গাজর , মটরশুটি , বাঁধাকপি , পেঁপে , লাউ , পাকা আম , সবুজ ও হলুদ রংয়ের শাকসবজি ও ফল , দুধ , মাখন , ডিম , মাছের তেল , পাঠার মেটুলি , খাসির চর্বি প্রভৃতি খাদ্যে ভিটামিন ' এ ' থাকে । শাক , ( খ ) ভিটামিন ' বি ' ঃ এই জাতীয় ভিটামিনের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য , অজীর্ণ , অক্ষুধা , বেরি - বেরি , মুখে জিভে ঘা , স্তনে দুধের অভাব , শিশুদের ওজন কমা , শীর্ণতা প্রভৃতি রোগ হয় । যবের চাতু , ছোলা , ভুট্টা , ডাল , কড়াইশুটি , বিভিন্ন সবুজ সয়াবিন , চীনাবাদাম , সিম , মাছের ডিম , ডিমের কুসুম , পাঁঠার মেটুলি প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে এবং কমলালেবু , নারকেল , আলু , বাঁধাকপি , পেঁয়াজ , টমেটো দুধ , গুড় , মাংস , ছানা , প্রভৃতিতে কিছু পরিমাণ , ভিটামিন ' বি ' পাওয়া যায় । ( গ ) ভিটামিন ' সিঃ & এই জাতীয় ভিটামিনের অভাবে স্কার্ভি রোগ হয় । রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা কমে যায় । দাঁত ও অস্থির পুষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে , শিশুর ওজন কমে যায় ,

শীর্ণতা ও খিট্‌খিটে প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয় । সব রকম লেবু , টমেটো , তরমুজ , আনারস , কলা , আখ , মুগ , যব , অঙ্কুরিত ছোলা , আপেল , পেঁয়াজ , পালংশাক , বাঁধাকপি , রাঙা আলু , কড়াইগুটি , মটরশুটি , দুধ , দই , ঘোল , প্রভৃতিতে মিটামিন ' সি ' পাওয়া যায় । ( ঘ ) ভিটামিন ' ডি ' ঃ এই জাতীয় ভিটামিনের অভাবে শিশুদের শীর্ণতা রিকেট , অস্থি কোমলতা , দাঁতে পোকা লাগা , প্রভৃতি রোগ হয় । খাদ্যের ক্যালসিয়াম , ফসফরাস প্রভৃতি লবণ জাতীয় পদার্থ শোষণ ও সমতার জন্যও ভিটামিন ' ডি ' প্রয়োজন । সূর্য রশ্মি , কডলিভার অয়েল , শার্ক লিভার অয়েল , মাছের ডিম , পাঁঠার মেটুলি , ডিমের কুসুম , দুধ , মাখন , বড়ি , আচার প্রভৃতিতে ভিটামিন ' ডি ' পাওয়া যায় । ( ঙ ) ভিটামিন ' ই ' ঃ এই জাতীয় ভিটামিনের অভাবে গর্ভস্থ সন্তান মরে যাওয়া , গর্ভ নষ্ট হওয়া প্রভৃতি রোগ হয় । বাদাম , সয়াবিন , মাছের বা খাসির তেল , নারকেল , কলা , দুধ , মাংস , ডিম প্রভৃতিতে ভিটামিন ' ই ' পাওয়া যায় । রোগীর চিকিৎসা করতে হলে ঔষধ এবং খাদ্যের পাশাপাশি আরো কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা উচিত । রোগীর ঘর প্রশস্ত , আলো হাওয়া যুক্ত , তঙ্ক এবং অন্য ঘর থেকে পৃথক হলে ভালো হয় , রোগীর পোষাক এবং বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত এবং মাঝে মাঝে রোদে দেওয়া উচিত । যিনি রোগীর পরিচর্যা করবেন তাঁর পোষাক আঁটোসাটো হওয়া উচিত । পরিচর্যাকালে তার পেট যেন খালি না থাকে । রোগীর মল , মূত্র , বমি , কাশি , পথ্য , নাড়ী , শ্বাস প্রশ্বাস , ঔষধ , তাপ ও অন্যান্য লক্ষণসমূহের প্রতিদিনের বিবরণ একটি কাগজে লিখে রাখা উচিত ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন