বনৌষধির মধ্যে তুলসী সর্বোৎকৃষ্ট বলে স্বীকার করা হয়েছে । মেটেরিয়া মেডিকা'তে এই গাছকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে ।
তুলসী (ইংরেজি: holy basil, বা tulasī) ( বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum Sanctum)
★দৈনন্দিন জীবনে তুলসীর প্রয়ােগ★
১/কার্তিক মাসে প্রতিদিন প্রাতঃকালে দু - তিনটি করে তুলসী পাতা খালিপেটে
খেলে পুরাে বছর কোন প্রকারের রােগ হবে না । কার্তিক মাসে আবহাওয়ায় পাতার প্রয়ােগ সর্বদা দেহকে নীরােগ রাখে ।
২/তুলসীর গন্ধ রক্তবিকার নাশ করে ।
৩/গােসল করার আগে তুলসীর কিছু পাতা পানিতে দিয়ে কিছুক্ষণ বাদে সেই তে গােসল করলে কোনও প্রকার চর্মরােগ হয় না ।
৪/খাবারপানির পাত্রে তুলসী পাতা দিয়ে সেই পানি পান করলে উদর সংক্রান্ত নও রােগ হবে না ।
৫/তুলসীর মালা , কণ্ঠী ধারণ করলে শরীর সর্বদা স্ফুর্তিময় ও সুস্থ থাকে ।
৬/তুলসী কামবাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে । কামশক্তিকে তাে বৃদ্ধি করেই , কিন্তু টা সাত্বিক এবং সীমিত রূপে ।
৭/তুলসীপাতা চিবােলে দতে পােকা লাগে না । দাঁত মজবুত , উজ্জ্বল হয় এবং তের আয়ু বৃদ্ধি হয় ।
৮/তুলসীপাতার রস নিয়ে মালিশ করলে হাড় শক্ত হয় , দেহ কান্তিময় হয় , দহকে নীরােগ রাখে । সাবান , তেল , ক্রীম প্রভৃতির হলে তুলসীর রস প্রয়ােগ করলে নানাপ্রকার দৈহিক সুস্থতা লাভ হয় ।
৯/রাতকানা রােগ ও তুলসীপাতার রস এক ফোটা করে দুটি চোখে দিতে হবে এবং প্রত্যেক ২ ঘণ্টা অন্তর সেবন করতে হবে । এইভাবে সকাল - সন্ধ্যায় দিতে হবে প্রত্যহ - এক মাস পর্যন্ত । মরিচ ও চোখের পুতলীর দোষ দূর করে । অতএব মরিচ ভিজে কাপড়ে রাখতে হবে । তাহলে মরিচের দানাগুলি ফুলে উঠবে । তখন তার ছাল তুলে ফেলে রেখে দিতে হবে । তারপর তুলসীর রসের সঙ্গে পিষে বাটিকা তৈরী করে নিতে হবে । সকাল - সন্ধ্যায় একটি কনের বাটি যে চোখে কাজলের মতাে দিতে হবে এম চোখে একটু অসহ্য লাগবে । তার পর ঠিক হয়ে যাবে । এই ভাবে কিছুদিনের মধ্যেই । রাতকানা রােগ আরােগ্য হবে ।
১০/আধকপালী : এটি একপ্রকার মাথার যন্ত্রণা । এটি মুধুমাত্র মাথার অর্ধাংশে হয়ে থাকে । এতে রোগী খুবই কষ্ট পায় । এইরকম হলে- তুলসীর কচি মঞ্জরী নিয়ে ছায়াতে শুঙ্ক করে নিতে হবে এবং অল্প পেষণ করে নিতে হবে । মাত্র ২ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে চেটে খেতে হবে । এই ভাবে ব্যবহার করলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে ।
১১/চক্ষু উঠা ঃ চোখ ওঠা একটি সংক্রামক রোগ । ঠাণ্ডা - গরমে ঘোরাফেরার ফলে এই রোগ হয়ে থাকে । এই অবস্থায় তুলসীপাতার রস চোখে কাজলের মতো লাগাতে হবে অথবা তুলসীপাতার রসে সামান্য মধু মিশিয়ে চক্ষুতে এক এক ফোঁটা দিতে হবে । এইভাবে দিলে চক্ষু উঠা , চোখে পানি পড়া প্রভৃতি আরোগ্য হয় ।
১২/কোষ্ঠকাঠিন্য ঃ পেট পরিস্কার অর্থাৎ পায়খানা পরিষ্কার না হলে , গলার মধ্যেও তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় , কাশি এবং সেইসঙ্গে মাথা ভার হয়ে থাকে । এই অবস্থা ২০ গ্রাম তুলসী পাতার সঙ্গে ৫০ গ্রাম গোলাপী ফিটকিরি চূর্ণ করে এক একটি মটরের মতো বটিকা তৈরি করে চায়াতে শুষ্ক করে নিতে হবে । এবার এক - একটি বটিকা সকালে ও সন্ধ্যায় পানসহ সেবনে কোষ্ঠবদ্ধতা , পায়খানার কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
১৩/কুষ্ঠরোগ ঃ এই রোগ হলে , তুলসীর রস নিরন্তর সেবন করা আবশ্যক । যদি আঙুল গলে যায় এবং হাড়ে পর্যন্ত আক্রমণ করে , তবুও তুলসীর রসের এমন শক্তি যে কুন্ঠ নীরোগ করে দেয় । যদি শ্বেত কুণ্ঠ হয় , তাহলে তুলসীর ৫ টি পাতা সকালে চিবিয়ে খেতে হবে । পাঁচটি পাতা দুপুরে এবং পাঁচটি পাতা সূর্যাস্তের আগে খেতে হবে বেশ কিছুদিন । তাতে উপকার হয় । তুলসীগাছের মূলের মাটির সঙ্গে তুলসীপাতা ঘষে দাগের ওপর প্রলেপ দিলে দাগ থাকে না ।
১৪/গলিত কুণ্ঠ হলে ংঃ তুলসীগাছের মূল এবং ওঁঠ চূর্ণ গরম পানিসহ পান করবে । -তুলসীপাতার রস ও মধু মিশিয়ে চেটে খেতে হবে । যদি কুণ্ঠ খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করে , তাহলে তুলসীপাতার রস ও গোমূত্র একত্রে মিশিয়ে সকাল - সন্ধ্যায় পান করতে হবে ।